About

১৮৮০-এর দশকে ভারতের স্বাধীনতা আন্দোলন শুরু হয়েছিল। এই সময় ভারতীয় জাতীয়তাবাদীদের বিদ্রোহ ভারতীয়দের কল্পনাশক্তিকে জাগরিত করে তুলেছিল। এই আন্দোলনকে সাহায্য করার জন্য উত্তর কলকাতার মোহনবাগান অঞ্চলের মিত্র ও সেন পরিবারের সাহায্যে ভূপেন্দ্রনাথ বসু ১৮৮৯ সালের ১৫ অগস্ট ‘মোহনবাগান স্পোর্টিং ক্লাব’ প্রতিষ্ঠা করেন। কথিত আছে, মোহনবাগান ভিলায় ইডেন হিন্দু হোস্টেলের বিরুদ্ধে এই দল প্রথম খেলেছিল। প্রথম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকীর ঠিক আগে অধ্যাপক এফ. জে. রো জিজ্ঞাসা করেছিলেন যে, এই দল কোনো রাইফেল শ্যুটিং বা আংলিং বা এই জাতীয় খেলার সঙ্গে যুক্ত কিনা। মোহনবাগান এই জাতীয় খেলার সঙ্গে যুক্ত নয় জেনে তিনি পরামর্শ দিয়েছিলেন দলের নাম পালটে ‘মোহনবাগান অ্যাথলেটিক ক্লাব’ রাখতে। ক্লাবের কর্মকর্তারা এই পরামর্শ মেনে নিয়ে ক্লাবের নাম পরিবর্তন করেন। ১৮৯১ সালে কলকাতার শ্যামপুকুর অঞ্চলে এই দল চলে আসে। পরে এই দল উঠে যায় শ্যাম স্কোয়ার অঞ্চলে। ১৮৯৩ সালে মোহনবাগান কোচবিহার কাপে অংশগ্রহণ করে। এটিই ছিল ক্লাবের প্রথম টুর্নামেন্ট।

পরবর্তীকালে মোহনবাগান কোচবিহার কাপ ও ট্রেডস কাপ সহ বিভিন্ন টুর্নামেন্টে অংশগ্রহণ করে। কিন্তু জয়লাভে ব্যর্থ হয়।[৭] পরবর্তীকালে কলকাতা পৌরসংস্থা শ্যাম স্কোয়ার নামে একটি সরকারি স্কোয়ার উদ্বোধন করলে, এরিয়ানস ও বাগবাজার ক্লাবের সঙ্গে মোহনবাগান এই স্কোয়ারে জায়গা পায়। ১৮৯৫ থেকে ১৯০০ সাল পর্যন্ত শ্যাম স্কোয়ার ছিল মোহনবাগানের তৃতীয় মাঠ।

১৯০৪ সালে কোচবিহার কাপে অংশ নিয়ে মোহনবাগান প্রথম ট্রফি জেতে। ১৯০৫ সালে তারা আবার এই ট্রফি জিতেছিল। এই বছরই চুঁচুড়ায় আয়োজিত গ্ল্যাডস্টোন কাপে তৎকালীন আইএফএ শিল্ড জয়ী ডালহৌসিকে মোহনবাগান ৬-১ গোলে পরাজিত করে। ১৯০৬ সালে মোহনবাগান ট্রেডস কাপ, গ্ল্যাডস্টোন কাপ ও কোচবিহার কাপ এক সঙ্গে জয় করে।১৯০৭ সালে মোহনবাগান আবার ট্রেডস কাপ জেতে। ১৯০৮ সালেও এই কাপ জিতে পরপর তিন বছর এই কাপ জয়ের রেকর্ড সৃষ্টি করে মোহনবাগান।

১৯১১ সালে মোহনবাগান ইস্ট ইয়র্কশায়ার রেজিমেন্টকে ২-১ গোলে পরাজিত করে প্রথম ভারতীয় দল হিসেবে আিএফএ শিল্ড জয় করে। উল্লেখ্য, এই খেলায় মোহনবাগানের ফুটবলাররা খালি পায়ে খেলেছিল। অন্যদিকে ইস্ট ইয়র্কশায়ার রেজিমেন্টের ফুটবলারদের যথোপযুক্ত পোশাক ছিল। মোহনবাগানের এই জয়টিকে ভারতের ইতিহাসে একটি ঐতিহাসিক ঘটনা আখ্যা দেওয়া হয়। কবি করুণানিধন বন্দ্যোপাধ্যায় এই জয় উপলক্ষে একটি জনপ্রিয় গান রচনা করেছিলেন। গানটি মানসী পত্রিকার সেপ্টেম্বর-অক্টোবর সংখ্যায় প্রকাশিত হয়। এই গানটির প্রথম কয়েক লাইন ছিল এই রকম:

জেগেছে আজ দেশের ছেলে পথে লোকের ভিড়,
অন্তঃপুরে ফুটল হাসি বঙ্গরূপসীর।
গোল দিয়েছে গোরার গোলে বাঙালির আজ জিত,
আকাশ ছেয়ে উঠছে উধাও উন্মাদনার গীত।
আজকের এই বিজয়বাণী ভুলবে নাকো দেশ,
সাবাশ সাবাশ মোহনবাগান! খেলেছ ভাই বেশ!
১৯১৫ সালের ১৫ মে মোহনবাগান প্রথম কলকাতা ফুটবল লিগের ফার্স্ট ডিভিশনে খেলে ক্যালকাটা ক্লাবের বিরুদ্ধে। এই লিগ ছিল ভারতের প্রথম ফুটবল লিগ। ১৯৩৭ সালে মোহনবাগান ইংল্যান্ডের ইংলিশটন করিন্থিয়ানসের বিরুদ্ধে প্রথম আন্তর্জাতিক ম্যাচ খেলে। ১৯৩৯ সালে মোহনবাগান দীর্ঘ ২৫ বছর অপেক্ষার পর প্রথম ভারতীয় কলকাতা ফুটবল লিগের চ্যাম্পিয়ন হয়।

১৯৪৩ সালে মোহনবাগান প্রথম ভারতীয় দল হিসেবে আহত খেলোয়াড়দের চিকিৎসার সাহায্যের জন্য বিমা প্রকল্প চালু করে ইতিহাস সৃষ্টি করে। এক বছরের মধ্যেই কয়েকজন ডাক্তারকে নিয়ে একটি মেডিক্যাল বোর্ড গঠিত হয়। এই বছর মোহনবাগান দ্বিতীয়বার কলকাতা ফুটবল লিগের চ্যাম্পিয়ন হয়। এই লিগে ২৪টি ম্যাচ খেলে মোহনবাগান ৩৯ পয়েন্ট পেয়েছিল। সেই সঙ্গে এই বছর মোহনবাগান ট্রেডার্স কাপও জেতে। পরের বছর মোহনবাগান আবার লিগ জয় করে। ১৯৪৭ সালে মোহনবাগান আবার আইএফএ শিল্ড জয় করে। এই জয়ের সঙ্গে সঙ্গে মোহনবাগান স্বাধীনতার পর প্রথম আইএফএ শিল্ড-জয়ী ভারতীয় দলে পরিণত হয়। এই বছর মোহনবাগান তার প্রধান প্রতিপক্ষ ইস্টবেঙ্গল ক্লাবকে পরাজিত জয়ে কলকাতা ফুটবল লিগও জয় করেছিল। এরপর ১৯৫২ সালে মোহনবাগান আবার আইএফএ শিল্ড জেতে। ১৯৫৪ সালে এই দল পরপর আইএফএ শিল্ড ও ফার্স্ট ডিভিশন কলকাতা ফুটবল লিগ জয় করে কলকাতার দ্বিমুকুট পায়। মোহনবাগানই প্রথম এই কীর্তি স্থাপন করেছিল।১৯৬০ সালে মোহনবাগান আবার দ্বিমুকুট পায়। ১৯৭৭ সালে মোহনবাগান পরপর আইএফএ শিল্ড, ডুরান্ড কাপ ও রোভার্স কাপ জয় করে ত্রিমুকুট পায়। এই দলই প্রথম ভারতীয় ত্রিমুকুট জয়ী দল হিসেবে ইতিহাস গঠন করে।

১৯৭৭ সালে মোহনবাগান বিখ্যাত নর্থ আমেরিকান সকার লিগ দল নিউ ইয়র্ক কসমসের বিরুদ্ধে একটি মৈত্রী ফুটবল ম্যাচ খেলে। এই ম্যাচে পেলে নিউ ইয়র্ক কসমসের হয়ে খেলেছিলেন। ইডেন গার্ডেন স্টেডিয়ামে আয়োজিত এই ম্যাচে ৮০,০০০ দর্শক এসেছিলেন।ম্যাচটি ২-২ গোলে ড্র হয় এবং তারকাসমন্বিত কসমসের খেলোয়াড়েরা মোহনবাগান খেলোয়াড়দের বিস্তর প্রশংসা করেন। 

এরপর ১৯৭৭ সালে মোহনবাগান প্রথম ফেডারেশন কাপের ফাইনালে ওঠে। কিন্তু এই ম্যাচে তারা ইন্ডিয়ান টেলিফোন ইন্ডাস্ট্রিজের কাজে ১-০ গোলে পরাজিত হয়। ১৯৭৮ সালে মোহনবাগান আবার এই টুর্নামেন্টের ফাইনালে ওঠে। কিন্তু এবার তাদের প্রধান প্রতিপক্ষ ইস্টবেঙ্গল কাপের সঙ্গে ট্রফি ভাগ করে নিতে হয়। ১৯৮০ সালে আবার মোহনবাগান ফেডারেশন কাপের ফাইনালে ওঠে। এই ম্যাচও তারা ইস্টবেঙ্গলের সঙ্গে ১-১ গোলে ড্র করে। পরের বছর, ১৯৮১ সালের ফেডারেশন কাপে তারা ফাইলানে মহামেডান স্পোর্টিং ক্লাবকে.২-০ গোলে পরাজিত করে প্রথম এই কাপ জেতে। এক বছর পর ম্ফৎলাল হিলসকে ১-০ গোলে পরাজিত করে মোহনবাগান আবার ফেডারেশন কাপ জেতে। ১৯৮৬ সালে ইস্টবেঙ্গলকে ১-০ গোলে পরাজিত করে এবং ১৯৮৭ সালে সালগাঁওকর স্পোর্টিং ক্লাবকে পরাজিত করে মোহনবাগান পরপর দুই বছর ফেডারেশন কাপ জেতে। ১৯৯২ থেকে ১৯৯৪ সাল পর্যন্ত পরপর তিন বছর ইস্টবেঙ্গল মাহিন্দ্রা অ্যান্ড মাহিন্দ্রা ও সালগাঁওকর স্পোর্টিং ক্লাবকে যথাক্রমে ২-০, ১-০ ও ৩-০ গোলে পরাজিত করে মোহনবাগান তিনবার ফেডারেশন কাপ জেতে।


যুবভারতী ক্রীড়াঙ্গনে মোহনবাগান ও এফসি বায়ার্ন মিউনিখ দলের খেলা
১৯৯৮ সালে মোহনবাগান প্রথম একসঙ্গে আইএফএ শিল্ড, ফেডারেশন কাপ ও জাতীয় ফুটবল লিগ জয় করে। ২০০৭ সালে মোহনবাগান.৪-০ গোলে ডেম্পো স্পোর্টিং ক্লাবকে হারিয়ে মোহনবাগান ইন্ডিয়ান সুপার কাপ জিতেছিল। ২০০৮ সালে মোহনবাগান জার্মান আন্তর্জাতিকের বিরুদ্ধে খেলার সুযোগ পায়। এফসি বায়ার্ন মিউনিখের অফিসিয়াল টেস্টিমোনিয়ালে ছিলেন অলিভার কান। কান ছাড়াও জে রোবার্তো ও মার্ক ফন বোমেল বায়ার্ন দলে উপস্থিত ছিলেন। ২০০৮ সালের ২৭ মে যুবভারতী ক্রীড়াঙ্গনে ম্যাচটি আয়োজিত হয়েছিল।

No comments

Powered by Blogger.