মোহনবাগান আমাদের পরিবার - সায়ন চ্যাটার্জি


২০১৫ এর ৩১ এ মে , সবে চাকরি পেয়েছি , আহমেদাবাদ এ কোম্পানি র ফ্লাট এ এ টিভি এর সামনে বসে আছি , ফুটবল ম্যাচ চলছে , ৭০ মিনিট , ৮০ মিনিট , টেনশন বাড়ছে , অসহ্য উত্তেজনায় রীতিমতো হাত পা ছুড়ছি , টেবিল এ ঘুসি মারছি , ৮৮ মিন , একটা কর্নার , একটা হেড এ গোল , বদলে দিলো সব কিছু . একটা পাথর নেমে গেছিলো বুক থেকে.


অনেক ছোটবেলায় মোহনবাগান হয়েছিলাম কারণ ইস্ট বেঙ্গল এর জার্সি র থেকে মোহন  বাগান এর জার্সির রং আমার বেশি পছন্দ হয়েছিল , তখন ও আমি ফুটবল তো দূর কিছুই বুঝতে শিখিনি , ধীরে ধীরে বোরো হলাম , জানলাম এই সবুজ মেরুন জার্সি র ইতিহাস , ১৯১১ এর শিল্ড , ১৯৭৭ এ পেলে ম্যাচ র ও কত ইতিহাস , পড়া থাকতো , সব ম্যাচ দেখতে  পেতাম না ,  ছোটবেলায় এত টিভি চ্যানেল  ছিল না , ডিডি বাংলায় রাত ১০:২০ র খবর ভরসা ছিল ম্যাচ এর রেজাল্ট জানার , আর সেটা  না হলে পরদিন সকালের কাগজ এলেই দৌড়ে  গিয়ে সেটা নিয়ে লাস্ট পেজ উল্টে ম্যাচ এর রেজাল্ট , এভাবেই শুরু মোহন বাগান প্রেম.

কলেজ এ উঠে ঠিক হলো ডার্বি দেখতে যাবো , আমি আর এক বন্ধু , আইএফ এ  শিল্ড এর সেমিফাইনাল , মাঠে গিয়ে বন্ধু  কে আর খুঁজে পাই না , এক কাকু আমাকে নিয়ে গেলেন প্রথম বের মোহন বাগান গ্যালারি তে , বললেন "বন্ধু কে কি দরকার , এই ৩৫ থেকে ৪০ হাজার লোক আজ থেকে তোমার ফ্যামিলি ". সেই কাকুর সাথে আর দেখা হয়নি . প্রচুর অদ্ভুত অদ্ভুত লোক দেখেছিলাম সেদিন , কেউ সারা রাত না খেয়ে সকালে গিয়ে মন্দির এ পুজো দিয়ে প্রসাদ নিয়ে মাঠে এসেছে , কেউ নাকি লাস্ট এক মাস ধরে ঠিক করে টিফিন খায় নি ডার্বি তে আসতেই হবে বলে , সে না এলে নাকি মোহন বাগান জেতে না ডার্বি , সেদিন জিততে পারিনি , হেরে যাওয়ার পর বাস এ ফেরার টাইম একজন কে অবিরাম কাঁদতে দেখেছিলাম , পর দিন এক বন্ধু কে বলতে গেছিলাম , বললো এরা সব পাগল , বাদ দে .

বাদ দেয়া হয়নি সেই ছোটবেলা থেকে , আর কি বাদ দেয়া যায় , চলতে থাকে ম্যাচ দেখা , গোল হলে লাফিয়ে উঠে পাগলের মতো চিৎকার আর গোল খেলে কষ্ট পাওয়া . স্পনসর নেই তাতে কি , ৫ বছর ট্রফি পাই নি তাতে কি , র কোনো টীম দেখাতে পারবেন যারা একজন সমর্থক মারা গেলে তাকে সম্মান জানাতে ম্যাচ এর আগে প্ল্যাকার্ড নিয়ে দাঁড়িয়ে পরে , ম্যাচ এর শেষ এ একজন বিদেশি খেলোয়াড়  পোস্ট করে "সৌম্য এই জয় তোমার জন্যে".

দাদা আমরা কোনো ফুটবল টীম নোই , আমরা একটা পরিবার . যে আসে এই পরিবার তাকে আপন করে নেয় আর সেও এত ভালোবাসা পেয়ে এই পরিবার এর একজন হয়ে যায় . 

এই পরিবার এর জন্যে ভাই ভাই ঝগড়া করে , এই পরিবার এর জন্যে কেউ সব কাজ ফেলে মাঠে এ আসে , আবার কেউ চেন্নাই এর অফিস ক্যান্টিন এ বসে একজন তামিল কে বোঝায় মোহন বাগান আসলে কি . এই পাগলামো , এই আবেগ চলতেই থাকবে , আজ আমরা আছি , কাল পরের জেনারেশন আসবে  , কিন্তু  মোহন বাগান থেকে যাবে সঙ্গে নিয়ে পরিবার এর ভালোবাসা নিয়ে , চিরকাল.
ফেসবুক ক্রমাগত আমাদের গ্রুপ শেয়ারিং ব্লক করে চলেছে, সুতরাং, মোহন বাগান সম্পর্কিত সমস্ত খবর সবার আগে পেতে এক্ষুনি ব্লগ এর উপরে পুশ বটন অ্যালাও করে দিন আর আমাদের ফেসবুক পেজেলাইকের মাধ্যমে আমাদের সাথে যোগাযোগ রাখুন, পোস্টটি পছন্দ হলে শেয়ার করতে অবশ্যই ভুলবেন না কিন্তু, লাইক করুন আমাদের ফেসবুক পেজে "আমরা মোহনবাগানি" ব্লগের পাশে থাকবেন। - জয় মোহন বাগান

loading...

2 comments:

Powered by Blogger.