শ্যাম থাপার পায়ে বল ভাষ্করের চোখে জল | ইন্দ্রনীল বাপি রায়
#Rhyme_of_an_ancient_mariner_2#
#শ্যাম_থাপার_পায়ে_বল_ভাষ্করের_চোখে_জল_1978#
"শ্যাম থাপার পায়ে বল/ভাষ্করের চোখে জল"-1978 সাল থেকে কয়েকটা বছর এটা ছিলো মোহনবাগান সমর্থকদের প্রিয় ক্যাচলাইন।1977 সালে আই এফ এ শিল্ড,পেলে ম্যাচ থেকে মোহনবাগানে শ্যামদার যুগ শুরু।আগে ইষ্টবেঙ্গলী হিসেবে পরিচিত শ্যামদাকে প্রথমদিকে মোহনবাগানীরা মেনে নিতে পারছিলেননা,শ্যাম কিন্তু কখনো ভৌমিক হয়ে যাননি।পেলে ম্যাচে প্রথমার্ধ মাঠে ছিলেন-মনে আছে ম্যাসিওরের ভূলে দু পায়ে দু রকম জুতো পরে মাঠে নেমে গেছিলেন।বিপক্ষে পেলে,আলবার্টো,কিনাগ্লিয়া-carried away হয়ে গিয়ে ম্যাসিওর খেয়াল করেননি তিনি শ্যাম থাপাকে কি জুতো দিচ্ছেন,বা শ্যামও খেয়াল করেননি তিনি কি পড়ে মাঠে নেমেছেন।যখন খেয়াল করলেন,তখন প্রথমার্ধের অর্ধেক গড়িয়ে গেছে।ওই পরেই দুরন্ত ফুটবল খেলেন শ্যাম,একটা গোলও করেন।তার কয়েক দিনের মধ্যে ডার্বিতে গোল,রোভার্স ডুরান্ডে গোল,"ইষ্টবেঙ্গলী"শ্যাম থাপা ক্রমশঃ যেন মোহনবাগানীদের নিজের মানুষ হয়ে উঠছিলেন। বাইশ নম্বর জার্সিটা যেন একান্ত তাঁর হয়ে উঠছিলো।মোহনবাগানীরা শ্যামের মধ্যে ত্রাতাকে খুঁজে পেতে শুরু করলেন,আর 1978 শ্যাম থাপাকে মোহনবাগানে চির প্রতিষ্ঠিত করে দিয়েছিলো।সুব্রত প্রসূন,প্রদীপ চৌধুরী কম্পটনদের মতো শ্যামও তাদের নিজের মানুষ হয়ে উঠলেন।
কলকাতা লিগ 1978.।ইষ্টবেঙ্গলের সেট টিম 1976 সালে ভেঙে গেছে,1977 সালে ইষ্টবেঙ্গল 2017 সালের ইষ্টবেঙ্গল হয়ে উঠেছে,লিলুয়ার বাইরে তো কিছু জোটেই নি,লিলুয়ার এপারেও লিগ ছাড়া কিছু হয়নি,শিল্ডও মোহনবাগানের কাছে হেরে খোয়াতে হয়েছে।এ হেন অবস্থায় চিরদিন গিমিক দিতে ভালোবাসা জি-প( (জীবন-পল্টু)জুটি নিয়ে এলেন সাবির আলিকে।সাবির আলির মনে হয় প্রথম দিকে সস্কই করতে কোন সমস্যা ছিলো,তিনি যখন সই করলেন,CFL তখন অর্ধেক গড়িয়ে গেছে,গতবারের চাম্পিয়ানরা উয়াড়ির কাছে হেরে খোরাক হয়েছেন।সামনে ডার্বি ম্যাচ, যেভাবেই হোক সাবিরকে চাই।
তা সাবির আলিকে কর্তারা এনেও দিলেন।ডার্বির আগে।ডার্বিতে ফিট রাখতে আগের রাজস্থান ম্যাচ সাব্বিরকে লেফট ইনে খেলানোও হলো।সাবির আলি সুরজিত, সেনগুপ্ত,মিহির বসু ও উলগানাথানের সঙ্গে ফরোয়াড লাইনে খেলার জন্য তৈরী।
মোহনবাগানও সেবার জেভিয়ার পায়াসকে আনে।সাবিরের পাল্টা চাল হিসাবে পিকে ব্যানার্জি পায়াসকে তৈরী করলেন।
আমাদের পাড়ার মশালধারীরা সাবিরকে পেয়ে বিশেষ উত্তেজিত।75 এর দল আবার যেন ফিরে এসেছে,এখন মাঠে নামলেই যেন জয় নিশ্চিত-77 এ লিলুয়াবেঙ্গল হয়ে যাওয়ায় দমে যাওয়া মশালধারীরা অমৃতের সন্ধান পেলেন।উদ্দিপনার পারদ রেকর্ড ছুঁলো।দল বেঁধে সবাই ম্যাচের দিন সকালে কালিঘাট গেলেন,পতাকা টাঙালেন।স্লোগান লিখলেন-"চিরন্তনের অগ্রদূত,মশালবর্ণ লাল হলুদ।"
একবার টিম মাঠে নামলেই হয় !
আমাকে অবশ্য আর রমিদাদের বাড়িতে ইষ্টবেঙ্গল বেষ্টিত হয়ে খেলা দেখতে হয়নি।এতোদিন পাড়াতে কেবলমাত্র ওদের বাড়িতে টিভি ছিলো,এবারে পারায় রায়রা টিভি সহ ভাড়া এলেন। মিঃ বি,কে,রায়,তাঁর স্ত্রী আর তিন পুত্র।জ্যেঠু SBI এর অফিসার ছিলেন,সবঃ অবসর নিয়েছেন,বড় ছেলে কুমারদা সদ্যবিবাহিত,সবে SBII তে জয়েন করেছেন,মেজো ছেলে গৌতমদা ঔরফে গৌপীদাও তখন SBI তে।এই বাড়িতে শুধু টিভি আছে,তা নয়,এরা অদ্যপ্রান্ত মোহনবাগান।আমার পাড়ায় আমার একমাত্র সমগোত্রিয়। জ্যেঠুর বড় ছেলে কুমারদা সব শুনে আমাকে ওঁদের বাড়ি খেলা দেখতে নিয়ে গেল,আমার থেকে কুড়ি বছরের বড় হয়েও আমাকে বলেছিলো,চল পার্টনার,ওদের হারিয়ে দিই।
সারা পাড়া রমিদাদের বাড়িতে ভিড় করেছে,আমি পাশে দোতলায় জ্যেঠু,কুমারদা গোপীদাদের সঙ্গে নিশ্চিন্তে খেলা দেখছলাম।মনে একটা ভয় অবশ্যই রইলো-হেরে গেলে ওই রমিদাদের বাড়ির সামনে দিয়ে ,সৃরা রাস্তা জুড়ে টাঙানো লাল হলুদ পতাকার তলা দিয়ে বাড়ি ফিরতে হবে।
প্রেস আর ইষ্টবেঙ্গল সাপোর্টারদের তৈরী সাবির মিথ সেদিন গুঁড়িয়ে দিয়েছিলো মোহনবাগান। ইষ্টবেঙ্গলের নবাগত রাজপুত্র বাবলু ভট্চার্য আর প্রদীপ চৌধুরীর দাপটে নড়াচড়া করবার সুযোগ পাননি,পুরোপুরি ফ্লপ শো হয়ে গেছিলেন।সুরজিত সেনগুপ্ত আর পিন্টু চৌধুরী কিছুটা লড়ার চেষ্টা করেছিলেন,আর ডিফেন্সে নবাগত মনোরঞ্জন ভট্টাচার্য কিছুটা ভরসা যোগালেও,পুরো ইষ্টবেঙ্গল টিম আমাদের সেট টিমের দাপটে সেদিন গুটিয়ে ছিলো-গোল যেন সময়ের অপেক্ষা।
আর এই ম্যাচে যে গোলটা হলো,সেটা আমার মতে,আমার দেখা ডার্বির সেরা গোল।মাঝমাঠ থেকে গৌতম সরকারের পাস ধরে সূভাষ ভৌমিক ডানপ্রান্ত ধরে কর্নার ফ্ল্যাগের কাছে গিয়ে একটা নিখুত সেন্টার তুললেন,বক্সের মধ্যে হাবিব সেটা হেড করে শ্যাম থাপার জন্ নামিয়ে দিলেন।আমার মনে আছে,শ্যামদা নিজের গোলের দিকে মূখ করৈ ছিলো,বলটা হাটুসমান আসতেই বাইসাইকেল কিক করলো,নিজের শরীরটা শূণ্যে ভাসিয়ে।বল রকেটের মতো জালে জড়িয়ে গেল,ভাষ্কর গাঙ্গুলী,মনোরঞ্জন ভট্টাচার্য,শ্যামল ঘোষের মতো ডিফেন্ডাররা তখন শুধু দর্শক।যেন অলৌকিক কিছু একটা দেখলো তারা।
গোলটা হয়েছিলো দ্বিতীয়ার্ধের শেষ দিকে,তারপরে আর ইষ্টবেঙ্গল মাথা তুলতে পারেনি।ওটাই ম্যাচের ফলাফল।
শ্যাম থাপা সেইদিন থেকেই মোহনবাগান পরিবারের অন্যতম সদস্য হয়ে উঠেছিলেন।এর পর আরো পাঁচ বছর মোহনবাগানে খেলেছেন,অধিনায়কত্ব করেছেন,প্রচুর গোল করেছেন।শ্যাম থাপা যতোটা ইষ্টবেঙ্গলের,ঠিক ততোটাই মোহনবাগানেরও।হয়তো একটু বেশী।
আমার মনে আছে,আমি খেলা দেখে ফেরার আগেই ওই পতাকা নেমে গেছিলো,কুমারদা আমাকে বাড়ি দিতে এসেছিলেন,ওদের দেখে হেসে তির্যক ভঙ্গিতে বলেছিলেন,"মিষ্টি কিনতে যাচ্ছি।"অন্ধ ইষ্টবেঙ্ল সাপোর্টার রমিদা উত্তরে একটা বিতর্কিত মন্তব্য করে ফেলেছিলো,কুমারদা লড়ে যায়,পরে বাকিদের হস্তক্ষেপে ব্যাপারটা মিটে যায়।
রমিদা সেন্ট জেভিয়ার্স কলেজের ছাত্র ছিলো তখন,অত্যন্ত ভদ্র মার্জিত ছেলে,ঊন্ধ ইষ্টবেঙ্গল সমর্থক।পতাকা লাগানো,ছবি লাগানো কালিঘাটে পূজো দিতে যাওয়া,সব ওর পরিকল্পনা ছিলো,হতাশ হয়ে নিজেকেসংযত রাখতে পারেনি,মন্তব্যটা করে ফেলেছিলো।আধ ঘন্টার ভিতরেই অবশ্য নিজে গিয়ে কুমারদার কাছে ক্ষমা চেয়ে এসেছিলো।
আমাদের পাড়ার বড়রা হয়তো খেলার সময় POLARISED হয়ে যেত,কিন্তু কখনো শালিনতা ছাড়ায়নি-এটা আমি পাড়া থেকে শিখেছি।
রমিদা এখন কোথায় জানিনা,কুমারদা আজও আমার মোহনবাগানের খেলা দেখার পার্টনার।কুমারদা অবসর নিয়েছেন,একমাত্র কন্যার বিয়ে দিয়েছেন,বৌদি ইহজগত ছেড়েছেন বেশ কিছুদিন হলো,কুমারদা আজও সেই তখনকার মতো উত্তেজিত হয়,এখনো মোহনবাগান ওর প্রাণ।
ফেসবুক ক্রমাগত আমাদের গ্রুপ শেয়ারিং ব্লক করে চলেছে, সুতরাং, মোহন বাগান সম্পর্কিত সমস্ত খবর সবার আগে পেতে এক্ষুনি ব্লগ এর উপরে পুশ বটন অ্যালাও করে দিন আর আমাদের ফেসবুক পেজেলাইকের মাধ্যমে আমাদের সাথে যোগাযোগ রাখুন, পোস্টটি পছন্দ হলে শেয়ার করতে অবশ্যই ভুলবেন না কিন্তু, লাইক করুন আমাদের ফেসবুক পেজে
"আমরা মোহনবাগানি" ব্লগের পাশে থাকবেন। - জয় মোহন বাগান
loading...
Mohunbagani ra always mohunbagani e theke jay .... 13 mnts e math chere palay na...
ReplyDelete