মাঠ তুমি কার? মৃন্ময় দে


এক শনিবার, তারিখটা ছিলো ১৪.০৭.২০১৮ আমরা কয়েকজন তখন আমাদের গ্যালারিতে বসে আড্ডা মারছিলাম এবং আমাদের মাঠের ভেতরে যাওয়ার মেন গেটটা যথারীতি  খোলা ছিলো। সেইসময়েই আমাদের মোহনবাগান মাঠে শেষ বিকেল বা বলা যায় প্রায় সন্ধ্যায় এক বিচিত্র দৃশ্য দেখলাম। আড্ডা মারতে মারতে কিছুক্ষন বাদে দেখলাম একজন বেশ রাশভারী চেহারার মানুষ জগিং করার পোশাক পরে আমাদের মাঠে ঢুকে পড়লেন এবং তার পেছন পেছন একটা অল্প বয়সি ছেলে, একজন মধ্যবয়সী মহিলা ও তাঁর সাথে একজন বেশি বয়সী মানে প্রায় বৃদ্ধাও গুটিগুটি পায়ে আমাদের মাঠে ঢুকলেন এবং অবশ্যই সাথে দুএকজন মোসাহেব গোছের মানুষও। সবথেকে মজার এবং চিত্তাকর্ষক বিষয় এটাই যে ওনারা মাঠের ভেতরে ঢুকে পড়ার পরেই মেন গেটটা মাঠের ‘ভেতর থেকে’ তালাবন্ধ হয়ে গেলো। তবে অবাক হওয়ার বা বলা ভালো বিস্ফারিত হবার তখনও বাকী ছিলো যখন দেখলাম ঐ রাশভারী মানুষটা পুরো মাঠের বাইরের দিক জুড়ে প্রথমে জগিং ও তারপরে রীতিমতো দৌড়তে এবং বাকিরা পায়চারি করতে শুরু করলেন। অর্থাৎ বোঝা গেলো যে আমরা অনেকেই যেমন পাড়ার মাঠে সপরিবারে সান্ধ্যভ্রমণ ও জগিং-হালকা দৌড় জাতীয় যা যা করি সবই তিনি ও ঐ পরিবারটা করছেন। 

তা আমার যেমন পশ্চাৎপক্ক (নিজেকে অকাল্পক্ক বলার তো আর বয়স নেই) স্বভাব। আমিও তাই আমাদের সদস্য গ্যালারির ফেন্সিংএর সামনে দাঁড়িয়ে থাকা এক মোসাহেবকে প্রশ্ন করলাম ওঁনার সাহেবের সম্বন্ধে এবং তার উত্তরে জানতে পারলাম যে, উঁনি কলকাতা কর্পোরেশনের একজন অতিউচ্চ পদস্থ অফিসার। এবং হয়তোবা আমার প্রশ্ন করার ধরনে কিছু একটা গন্ধ পেয়েছিলেন তাই এটাও যোগ করলেন যে ঐ সাহেব আমাদের মোহনবাগানের জন্য সারাবাছর অনেক অবদান রাখেন, জল আলো এসবের ব্যাবস্থা করে দেন, ইত্যাদি ইত্যাদি। এটাও জানতে পারলাম যে উঁনি ওঁনার সুযোগ সুবিধা মতো মাঝেমধ্যেই আসেন।


এই পরিপ্রেক্ষিতে আমার একটাই প্রশ্ন (জানিনা হয়তোবা আমিই নেগেটিভ ভাবনা বেশি ভাবি তাই এসব ‘অবান্তর’ প্রশ্ন আমার মনেই বেশি জাগে), ’একজন প্রভাবশালী ব্যাক্তি হলেই আমাদের সাধের-গর্বের মোহনবাগান মাঠকে পাড়ার মাঠের মতো ব্যাবহার করা যায়?’। হ্যাঁ, এটা একদম কোন ব্যাঙ্গ না করেই বলছি যে আমার জানার পরিধি অনুযায়ী ঐ অফিসার সত্যি খুব নিয়ম ও কর্মনিষ্ঠ অফিসার এবং ওঁনারা অবশ্যই সবাই আমাদের মাঠের ভেতরের অংশটুকুকে ব্যাবহার করছিলেন না। কিন্তু সেটাই কি আমাদের পুন্যভুমি ঐ মোহনবাগান মাঠকে পাড়ার মাঠের মতো ব্যাবহার করার ব্যাখ্যা হতে পারে? একি চরম অন্যায় ও অব্যাবস্থা আমাদের কলকাতার মাঠের তথা পরিকাঠামোর, এমনকি বড়দলগুলোর পর্যন্ত? একে তো শুধুমাত্র পরিকাঠামোতেই বিদেশের ধারে কাছে আজও আমরা পৌঁছাতে পারলাম না। যে মাঠে প্রাকটিস হয় সেই মাঠেই আবার আমরা ম্যাচ খেলতে নামি। তার সাথে মাঝেমধ্যেই অফডে তে নানা আন্যুয়াল স্পোর্টস–অফিস স্পোর্টস চলতেই থাকে, এর সাথে আবার যোগ হয়েছে ‘প্রভাবশালী’ মানুষের সপরিবারে সান্ধ্যভ্রমণ সহ জগিং-দৌড়ানো ইত্যাদি ইত্যাদি। তা সব গোষ্ঠীর কর্তাদের উদ্দেশ্যেই আমার প্রশ্ন, ‘তাহলে আমরা মোহনবাগানিরাও এবার থেকে এরকম ফাঁকা মাঠ পেলে সপরিবারে ইভিনিং ওয়াক করতে চলে এলে আপনাদের আপত্তি করার কিছু থাকবে নাতো? বিশেষ করে যারা সদস্য ও সদস্যা তাঁরা নিশ্চয়ই সেই অধিকার ও যোগ্যতা অর্জন করতেই পারেন, তাই তো???’।
ফেসবুক ক্রমাগত আমাদের গ্রুপ শেয়ারিং ব্লক করে চলেছে, সুতরাং, মোহন বাগান সম্পর্কিত সমস্ত খবর সবার আগে পেতে এক্ষুনি ব্লগ এর উপরে পুশ বটন অ্যালাও করে দিন আর আমাদের ফেসবুক পেজেলাইকের মাধ্যমে আমাদের সাথে যোগাযোগ রাখুন, পোস্টটি পছন্দ হলে শেয়ার করতে অবশ্যই ভুলবেন না কিন্তু, লাইক করুন আমাদের ফেসবুক পেজে "আমরা মোহনবাগানি" ব্লগের পাশে থাকবেন। - জয় মোহন বাগান

loading...

No comments

Powered by Blogger.