ইতিহাস ফিরে আসে - সৌম্যদীপ


সালটা ২০০২! কোচ ঘরের ছেলে বাবলু দা! ন্যাশনাল ফুটবল লিগ! চার্চিলের ডেরায় চার্চিলের বিরুদ্ধে খেলা! জিততেই হবে! আকাশে মেঘের খেলা! স্টেডিয়াম জুড়ে চার্চিলদের উচ্ছাস! খেলার ফল তখনও ০-০! এই ফলাফল থাকলে চার্চিলই হবে চ্যাম্পিয়ন! আকাশে কালো মেঘের খেলার মাঝেই, হঠাৎ ঝলসে উঠল, কোনো এক কৃষ্ণাঙ্গ আব্দুল স্যালিউ এর কৃষ্ণসার ডান পা! মোহনবাগান জিতল ন্যাশানাল ফুটবল লিগ!

আবার সাল ২০১৫! কোচ আরেক বাঙালি সঞ্জয় সেন! আই লিগ! আগেরবছরের চ্যাম্পিয়ন ব্যাঙ্গালোর এফ সির ডেরায় তাদের বিরুদ্ধে তাদের বিরুদ্ধে ম্যাচ! নিদেন পক্ষে ড্র চাই কাপের জন্যে! জন জনসনের গোলে তখন এগিয়ে ব্যাঙ্গালুরু! ওয়েস্ট ব্লক ব্লুসের উচ্ছাস! এই ফলাফল থাকলেই তারা চ্যাম্পিয়ন! পরপর দুবার! ম্যাচের বয়স তখন ৮৭ মিনিট! কোনো এক সনি নর্ডির সেন্টার থেকে মাথা ছুঁইয়ে গোল করে বেলো রজ্জাক নামে এক কৃষ্ণাঙ্গ, সাদা চামড়ার জন জন্সন বা অ্যাশলে ওয়েস্টউড কে বোধয় বুঝিয়ে গেলেন! জবাব দেওয়ার সময়ে এসেছে এবার! টুর্নামেন্টের অঘোষিত নায়ক আরেক কৃষ্ণাঙ্গ সুদূর ক্যামেরুনের পিয়েরে বোয়া!
এবার একটু পিছিয়ে যাই, যাতে বোঝা যায় এই জবাব দেওয়ার ব্যাপারটা আমাদের মজ্জাগত!
১৯১১! ১১ টা বাঙালি ছেলে! কেউ কাজ করে ইঁটভাটায়, কেউ পড়ে কলেজে, কেউ আবার বিপ্লবী, কেউ আবার সরকারি পদস্থ কর্মী! 'শ্রেণী' কথাটা বোধহয় তাদের মধ্যে আসেনি! ফুটবল বোধহয় 'শ্রেণী' ছাড়াই কথা বলে! 
বঙ্গভঙ্গের ডাক! ব্রিটিশ অত্যাচার! রুখে দাঁড়িয়ে এগারোজন! অস্ত্র বলতে ফুটবল! ফাইনাল ম্যাচ! বিপক্ষে ব্রিটিশ সিংহ! যারা অপরাজেয়! ইষ্ট ইয়র্কশায়ার! খেলার ফলাফল ১-১! মাঠে তখন শ্মশানের স্তব্ধতা! দলকে তবু উজ্জীবিত করে যাচ্ছে, কোনো এক শিবদাস ভাদুরী! ক্যাপ্টেন সে! হয়তো ভারতের প্রথম ক্যাপ্টেন! শেষ বাঁশি বাজার আগে গোল করে নায়ক হয়ে উঠল, স্কটিশ চার্চ কলেজের এক পড়ুয়া! অভিলাষ না কি যেন নাম! কোলে তুলে নিল ইঁটভাটায় কাজ করা, হীরক!
সর্বশক্তিমানও হারে! পীড়িতরাও জিততে পারে!
ওপরের প্রসঙ্গগুলো তুললাম! কারণ একটাই, ঘরের মাঠ হোক বা বিপক্ষের গুহা! পরিস্থিতি হোক যতই কঠিন! আমরা হার মানি না! লড়াই করি! এ তো শুধু খেলা নয় সংগ্রাম!
আমাদের দলটা বহু বছর ধরে 'শ্রেণী' প্রসঙ্গকে ফুৎকারে যে উড়িয়ে দিয়ে আসছে, সেটা আগের প্রসঙ্গগুলোতেই স্পষ্ট! সেটা কৃষ্ণাঙ্গ স্যালিউ হোক বা বোয়া বা সাদা চামড়ার লুসিয়ানো হোক, সাদা চামড়ার ডাফি হোক বা কৃষ্ণাঙ্গ সোনি হোক বা সরকারি কর্মচারী সুবীর হোক বা ইঁটভাটার হীরক! আমরা কিন্তু মিশে একে অপরের রক্তে! মোহনবাগান সেই রক্তের সম্পর্ক আনে!
কাল নায়ক হতে পারে, আমাদের ক্যাপ্টেন কাতসুমি বা স্কটিশ সাহেব ডাফি বা হাইতিয়ান সোনি! 
আবার হতে পারে কোনো এক আজহার, পাহাড়ি এক জেজে বা জঙ্গলমহলে স্টেইনগানের সামনে বলকে কথা বলানো কোনো এক পিন্টু! যেই হোক নায়ক, বাকিরা তাকে তুলে নেবে কোলে! কারণ ওই যে, 'শ্রেণী' আসে না!
সুদূর আইজলে জেতে পারছি না! তাই চোখ রাখবো টিভিতে! আর রাখবো বিশ্বাস! সবুজ মেরুণ রঙটার ওপর! ইতিহাস তৈরি করা যাদের রক্তে, তারা কাল আবার ইতিহাস তৈরি করবে! পাহাড়ের কোলেই উঠবে সবুজ মেরুণ ঝড়!
ইতিহাস যে বারবার ফিরে আসে! :-)
ফেসবুক ক্রমাগত আমাদের গ্রুপ শেয়ারিং ব্লক করে চলেছে, সুতরাং, মোহন বাগান সম্পর্কিত সমস্ত খবর সবার আগে পেতে এক্ষুনি ব্লগ এর উপরে পুশ বটন অ্যালাও করে দিন আর আমাদের ফেসবুক পেজেলাইকের মাধ্যমে আমাদের সাথে যোগাযোগ রাখুন, পোস্টটি পছন্দ হলে শেয়ার করতে অবশ্যই ভুলবেন না কিন্তু, লাইক করুন আমাদের ফেসবুক পেজে "আমরা মোহনবাগানি" ব্লগের পাশে থাকবেন। - জয় মোহন বাগান

loading...

No comments

Powered by Blogger.