ময়দানের বুড়ি পিসিমা | ময়ূখ নস্কর


আগেকার দিনে অনেক সংসারেই একজন বুড়ি পিসিমার দেখা মিলত। এঁরা ছিলেন বাল্যবিধবা। স্বামীর মৃত্যুর পর শ্বশুরবাড়িতে জায়গা না পেয়ে বাপ-ভাইয়ের সংসারে থাকতেন। নিজেরা জীবনে সুখ পাননি। তাই অন্য কারও সুখ দেখলে এঁরা (সবার কথা বলছি না। অনেকের কথা বলছি।) হিংসায় জ্বলে উঠতেন। চেষ্টা করতেন কীভাবে অন্যের সুখে কাঁটা ছড়ানো যায়। নিজের বাড়িতে অশান্তি লাগাতেন, পাড়া–‌প্রতিবেশীর সংসারেও আগুন লাগানোর চেষ্টা করতেন।

ইস্টবেঙ্গল ক্লাবের অবস্থা দেখে সেই বুড়ি পিসিমাদের কথা মনে পড়ছে। দীর্ঘ ১৪ বছর আই-লিগ নেই। মাঝে কয়েকবার ফেড কাপ পেয়েছিল, ইদানীং তারও দেখা নেই। সম্বল বলতে ক্যালকাটা ফুটবল লিগ। কিন্তু তার এমনই দুরবস্থা যে নিজেদের সমর্থকরাই বিক্ষোভ দেখানর সময় সেই লিগকে সি এফ এল বাল্বের সঙ্গে তুলনা করছে। বুড়ি পিসিমা যেমন জীবনে সুখ পাননি, ইস্টবেঙ্গলও সর্বভারতীয় ট্রফি পায়নি। এই না পাওয়ার জ্বালাকে আরও বাড়িয়ে দিয়েছে, প্রতিবেশী মোহনবাগানের সুখী সংসার।
গত ৩ বছরে মোহনবাগান আই- লিগে হয় বিজয়ী নয় রানার্স। ফেড কাপে চ্যাম্পিয়ন । এই অবস্থায় ইস্টবেঙ্গল সমর্থকরা সেটাই করছে, যেটা বুড়ি পিসিমারা করে থাকে। অর্থাৎ “মর মর” বলছে অভিশাপ দিচ্ছে। বলছে আমার কপাল যেমন পুড়েছে, তোর কপাল তেমনই পুড়ুক। কিন্তু শকুনের শাপে যেমন গরু মরে না, তেমনই পিসিমার শাপে মোহনবাগানের কোনও ক্ষতি হচ্ছে না। এখন ইস্টবেঙ্গলিরা গর্বের সঙ্গে হিসাব করছে, তাঁরা কতবার রানার্স হয়েছে। আচ্ছা রানার্স মানে কী? হেরোদের মধ্যে ফার্স্ট হওয়াকে রানার্স হওয়া বলে। মোহনবাগানিরা রানার্স হলে কান্নায় ভেঙে পড়ে, আর ইস্টবেঙ্গল হিসাব করে আমরা সাতবার রানার্স হয়েছি। শুনে আবার বাল্যবিধবা পিসিমাদের কথা মনে পড়ে যায়। পিসিমারা এমনি করেই বলতেন, আমিও সাড়ে তিন মাস স্বামীর ঘর করেছিলাম। আসলে, পিসিমাদের নিজের সংসারে সুখ নেই। একে তো আই-লিগ নেই, তারপর কর্তারা সমর্থককে পেটাচ্ছে, সমর্থকরা কোচকে পেটাচ্ছে, খেলোয়াড়রা মাঝের আঙুল দেখাচ্ছে, কোচ ক্লাবের নামে কেচ্ছা করছে, কর্তারা কোচকে না জানিয়ে প্র্যাকটিস ঠিক করছে। এই অবস্থায় লাল হলুদ সমর্থকরা মনে প্রানে চাইছে, লিগটা যেন আইজল পায়। নিজের ঘরের আগুন না নিভিয়ে পরের ঘর পোড়ানোর চেষ্টা।
ভেবে দেখুন, মোহনবাগানও দীর্ঘদিন ট্রফি হীন থেকেছে। তাই নিয়ে ক্লাবে বিক্ষোভও হয়েছে। কিন্তু কেউ কি কারো গায়ে থুতু দিয়েছে, কর্তারা কি সমর্থকদের পিটিয়েছে? মোহনবাগানও কোচ তাড়িয়েছে। একাধিকবার তাড়িয়েছে। কিন্তু কোনও কোচের সঙ্গে এমন কাদা ছোঁড়াছুঁড়ি হয়েছে? বরং প্রতিবার কোচকে ফুলের তোড়া দিয়ে সম্মানের সঙ্গে বিদায় জানানো হয়েছে।
ইস্টবেঙ্গলে দেখুন ব্যর্থতা মানেই গালাগাল, থুতু, গলাধাক্কা। সেখানে আইজলে হারার পরেও মোহন সমর্থকরা বিমানবন্দরে গিয়েছিল সমর্থন জানাতে, সমবেদনা জানাতে। এটাই তফাত। দুঃখের দিনেও সভ্যতা না হারানো, পরের ক্লাব নিয়ে মাথা না ঘামিয়ে, সব পরিস্থিতিতে নিজের ক্লাবকে আঁকড়ে ধরা……
কিন্তু দূর! বুড়ি পিসিমারা এসব বোঝে নাকি?
ফেসবুক ক্রমাগত আমাদের গ্রুপ শেয়ারিং ব্লক করে চলেছে, সুতরাং, মোহন বাগান সম্পর্কিত সমস্ত খবর সবার আগে পেতে এক্ষুনি ব্লগ এর উপরে পুশ বটন অ্যালাও করে দিন আর আমাদের ফেসবুক পেজেলাইকের মাধ্যমে আমাদের সাথে যোগাযোগ রাখুন, পোস্টটি পছন্দ হলে শেয়ার করতে অবশ্যই ভুলবেন না কিন্তু, লাইক করুন আমাদের ফেসবুক পেজে "আমরা মোহনবাগানি" ব্লগের পাশে থাকবেন। - জয় মোহন বাগান

loading...

4 comments:

  1. Offfff.অসাধারণ লেখা । ময়ুখ নস্করকে বলবো এই রকম লেখা আরও লিখতে ॥
    খুব সুন্দর

    ReplyDelete

Powered by Blogger.